ঘূর্ণিঝড় রেমালের ভয়াবহ দৃশ্য

 ঘূর্ণিঝড় রেমাল কেড়ে নিল ১২ টি প্রাণ 


ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে জলোচ্ছ্বাসে, ঘর ভেঙ্গে এবং দেয়াল ধসে এসব মৃত্যু ঘটেছে। 



ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে জলোচ্ছ্বাসে  ঘর ভেঙে এবং দেয়াল ধসের ৬ জেলায় ১২ জনের  মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। 

রোববার দুপুর থেকে সোমবার  দুপুরের মধ্যে পটুয়াখালী, সাতক্ষীরা, ভোলা, বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রামে এসব মৃত্যুর ঘটে। 

এর মধ্যে পটুয়াখালীতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি জোয়ারের মধ্যে ভেসে গিয়ে একজন এবং  গাছ পরে দুইজন মারা গেছেন। সাতক্ষীরাতেও  জলোচ্ছ্বাসে ভেসে একজনের মৃত্যু হয়েছে। 

বরিশালে ভবনের দুইজন গাছচাপায় একজন মারা গেছেন।ভোলায় ঝরে  ঘর ও গাছপালা গাছ চাপা পড়ে প্রাণ গেছে তিনজনে।

খুলনায়  ঘরের ওপর গাছ পড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আর চট্টগ্রামে নির্মাণ নির্মানাধীন ভবনের দেওয়াল ধসে  এক পথচারী মারা গেছেন।

প্রবল ঘূর্ণিঝড়  রে মাল রোববার রাতে খেপুপাড়া ও পশ্চিম বঙ্গের মাঝামাঝি এলাকা উপকূল অতিক্রম শুরু করে। পুরোপুরি স্থলভাগে  উঠে আসার পর বৃষ্টি ঝরে শক্তি হারিয়ে এ ঝড়স্থল নিম্নচাপে   চাপে পরিণত  হয়েছে। 

ঝড় দুর্বল হয়ে যাওয়ায় সংকেত নামানো হয়েছে। পায়রা ও মোংলা সমুদ্র বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে  যেতে বলা হয়েছে।আর  কক্সবাজার  ও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৯ নম্বর  মহাবিপদ  সংকেত নামিয়ে তিন নম্বর স্থানীয় সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। 


পটুয়াখালী 


ঝড় শুরুর আগে রোববার দুপুরে জলোচ্ছ্বাসের  সময় পটুয়াখালীতে বোন ও ফুফুকে উদ্ধার করতে গিয়ে পানের তোড়ে ভেসে মারা গেছে এক যুবক।

 মোঃ শরীফ হাওলাদার নামের ২৮ বছর বয়সী ওই যুবক  কলাপাড়া উপজেলার ধুলাসর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের অনন্ত পাড়া কার আব্দুল রহিম হাওলাদারের ছেলে।

উপজেলা  নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল বিডি নিউজ ডটকম কে বলেন,শরিফের ফুফু  মাতোয়ারা বেগম কাউয়ার চর এলাকায় বসবাস করেন।ওই বাড়িতে  তার বোনও ছিলেন। 

দুপুরের দিকে শরীফ তার বড় ভাই ও ফুফাকে  নিয়ে বোন এবং ফুফুকে  উদ্ধার করতে যায়। পথে বেড়িবাঁধের বাইরে একটি গ্রামীন সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। 

শরিফ সাঁতার কেটে সড়কটি পার হয়ে ফুফুর ঘরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ঢেউয়ের তোড়ে তিনি হারিয়ে যান। পরে এক ঘন্টা পর  তার লাশ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা।

এদিকে ঝড়োবাতাসে গাছ উপড়ে পড়ে পটুয়াখালীর দুমকি ও বাউফলের দুই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। 

বাউফলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ বশির গাজী জানান, উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন স্থানে একটি পরিতক্ত ঘরে চাপা পড়ে আব্দুল করিম নামে ৬৫ বছর বয়সী একজন মারা যান সোমবার সকালে। 

আব্দুল করিম নাজিরপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সোবাহান  মৃধার ছেলে। তিনি মানসিক  ভারসাম্যহীন ছিলেন বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন। 

দুমকি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীন মাহমুদ জানান, সকাল আটটার দিকে  পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের নলদোয়ানি এলাকায় নিজ বসত ঘরে গাছ  চাপা পড়ে জয়নাল হাওলাদার ৭০ বছর বয়সে একজন বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। ঘরে থাকা তার স্ত্রীও আহত হন। তাকে প্রাথমিক  চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। 

সাতক্ষীরা 


সাতক্ষীরার শ্যামনগর   উপজেলায়    ঘূর্ণিঝড় থেকে বাঁচতে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।

 রোববার সন্ধ্যায়  উপজেলার গাবুরা   ইউনিয়নের  নাপিতখালী   গ্রামে এ ঘটনা ঘটে বলে শ্যামনগর থানার ওসি আব্দুল কালাম আজাদ জানান। 

তিনি বলেন "ঘূর্ণিঝড়কে কেন্দ্র করে নাপিতখালী গ্রামে আশ্রয়  কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সন্ধ্যায় গ্রামের বাসিন্দা শওকত মোড়ল (৬৫) বাড়ি থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার সময় হয়তো হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেছেন।"

শওকাত মোড়লের পুত্রবধূ আসমা খাতুন সাংবাদিকদের  বলেন," সন্ধ্যার দিকে আমার শ্বশুর-শাশুড়ি দুইজন মিলেই নাপিত খালি আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছিলেন । ঝড় বাতাসে রাস্তায় পড়ে গিয়ে আমার  শশুর মারা গেছেন। "

খুলনা 


ঝড়ের  মধ্যে বসত ঘরের উপর গাছ পড়ে খুলনার  বটিয়াঘাটায়  লাল চাঁদ মোড়ল  নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে  হয়েছে। 

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর জানিয়েছেন, ৩৬ বছর বয়সী লালচাঁদ বটিয়াঘাটার সুরখালি ইউনিয়নের গাওহারা মৃত গহর আলী মোড়লের ছেলে।

 অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো.  মোহাম্মদ নাজমুল হুসাইন খান জানিয়েছেন, রোববার রাতে আশ্রয় কেন্দ্রে ছেলের লালচাঁদ। সোমবার সকালে বাড়ি ফিরে  যান তিনি। সেখানে গাছ চাপা পড়ে মারা যান। 

ভোলা 


ভোলার   লালমোহন উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় রে মালের তাণ্ডবে ঘরের নিচে চাপা পড়ে এক নারীর প্রাণ গেছে।

 সোমবার ভোর রাত চারটার দিকে চর ওমেদ ইউনিয়ন পরিষদের মেদ এলাকার এ ঘটনা ঘটে  বলে লালমোহন থানার ওসি এস এম মাহবুব ফুল আলম জানান।

 তিনি বলেন, "ঘূর্ণিঝড়ে ঘরের নিচে চাপা পড়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।  তবে এ ব্যাপারে এখনো বিস্তারিত জানা যায়নি।"

 ৫৫ বছর বয়সী মনে যা খাতুন চর উমেদ এলাকার আব্দুল কাদেরের স্ত্রী 

পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা মোঃ হান্নান বলেন,মনেজা খাতুন  রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। তার স্বামী  ও নাতনিও একই ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন।

ভোর  চারটার দিকে তীব্র ঝড়ের মধ্যে তাদের বসত ঘরটি বিধ্বস্ত হয়। এ সময় তার স্বামী ও নাতনি বের হতে পারলেও মনে যা ঘরের নিচে  যে চাপা পড়েন। পরে প্রতিবেশীরা গিয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করেন। 

এছাড়া দৌলতখান উপজেলার ঝড়ের মধ্যে গাছচাঁপা পরে রে মাইশা নামের চার বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন দৌলতখান থানার ওসির রোহান উদ্দিন।

আর  বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ঝড়ে গাছ চাপা পড়ে   জাহাঙ্গীর নামের ৫০ বছর বয়সী একজনের মৃত্যুর খবর দিয়েছেন বোরহানউদ্দিন থানার ওসি শাহীন। 

তবে এ দুটি ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।

 বরিশাল


বরিশালে  ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে  সৃষ্ট ঝড় বৃষ্টির মধ্যে একটি ভবনের দেয়াল ধসে পড়ার পর ওই হোটেলের মালিক ও কর্মীর মৃত্যু হয়েছে।

বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি  আরিচুল হক জানান,  সোমবার ভোরে চারটার দিকে নগরীর রূপাতলী  এলাকায় লিলি পেট্রোল পাম্পের পাশে এ ঘটনায় আরো একজন আহত হয়েছেন। 

নিহতরা হলেন-লোকমান হোটেলের মালিক  লোকমান হোসেন (৫৮) এবং কর্মী মোখলেসুর রহমান (28) । আহত  আরেক কর্মী  ক্শাকিবকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালপ করানো হয়েছে। 

বরিশাল নগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুলতান মাহমুদ বলেন, ভোরের লোকমান, মোকলেস  ও শাকিব হোটেলের  টিনশেদের ওই ভেতরে ঘুমিয়ে ছিলেন। বাইরে তখন ঝড়-বৃষ্টি চলছিল।

 "এক পর্যায়ে পাশের  তিন তলা ভবনের ছাদের দেয়ালের কিছু অংশ ধ্বসে হোটেলে টিনের চালের উপর পড়ে।  এতে ঘটনা  স্থলেই  দুইজনের মৃত্যু হয়।"

খবর পেয়ে   ফায়ার সার্ভিস দিয়ে দুজনের লাশ উদ্ধার এবং আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বলে জানান ওসি

এদিকে চর দাড়িয়াল গ্রামের ঝড়ের মধ্যে বাজারে যাওয়ার পথে গাছের ডাল পরে জালাল সিকদার  ্না্মের 55 বছর বয়সে একজনের মৃত্যু হয় বলে বারেকগঞ্জ থানার ওসি আফজাল হোসেন জানান। 

 চট্টগ্রাম 


চট্টগ্রাম নগরীতে একটি নির্মাণাধীন ভবনের দেওয়াল ধ্বসে পড়ে   এক পথচারীর প্রাণ গেছে। সোমবার সকালে নগরী বায়েজিদ বোস্তামীর চন্দ্রনগর   তালতলার জেডএ আবাসিক এলাকায়  এ ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানিয়েছে। 

নিহত পথচারীর নাম  সাইফুল ইসলাম হৃদয় (২৬) ; তিনি থাকতেন  খুলসি  থানার চৌধুরী নগর শতাব্দী হাউজিং এলাকায়, কাজ করতেন বায়জিদ তারা গেইট এলাকায় একটি কার্টুন ফ্যাক্টরিতে। হৃদয়ের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে।

 বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি সঞ্চয়  কুমার সিনহা বলেন,  " সকালে  কাজে যাওয়ার কথা  সময় নির্মাণাধীন ভবনের দেওয়াল ধ্বসে পড়ে ছেলেটি শরীরের উপরে। এতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। " 

মাদ্রাসার জন্য  এই ভবনটি নির্মাণ করা হচ্ছিল জানিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেছেন,ঘূর্ণিঝড়  রেমালের প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিপাতে দেওয়ালটি আলগা হয়ে পড়ে যায়। 


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url